নিউমোনিয়ার লক্ষণ | নিউমোনিয়া নিয়ে বিস্তারিত
নিউমোনিয়া | নিউমোনিয়ার লক্ষণ | নিউমোনিয়ার প্রতিরোধ | নিউমোনিয়ার প্রতিকার | নিউমোনিয়ার চিকিৎসা ও নিউমোনিয়া নিয়ে নিয়ে বিস্তারিত জানুন।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ | নিউমোনিয়া নিয়ে বিস্তারিত |
নিউমোনিয়া কী?
নিউমোনিয়া ইংরেজিতে যাকে বলা হয় (Pneumonia) হচ্ছে একটি ফুসফুসে প্রদাহজনিত একটি রোগ।এটি ফুসফুসের প্যারেনকাইমার প্রদাহ বিশেষ এবং এটি মানুষের শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। এটি মূলত ছড়ায় ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া,ফাঙ্গাস ইত্যাদি জীবাণুর মাধ্যমে।
কখন এর প্রাদুর্ভাব বেশি?
এটি বছরব্যাপি যেকোন সময় হতে পারে। তবে শীতকালে মূলত এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। শীতের সময় যত মানুষ মারা যায় তাদের অনেকাংশই মারা যায় এই নিউমোনিয়ার কারণে।
কাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়?
যেকোন বয়সের লোকের এ সমস্যা অর্থাৎ নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এটি নবজাতক শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। বয়স্ক ও নবজাত শিশুর ক্ষেত্রে এটার মৃত্যু ঝুঁকি ও মৃত্যু হারও বেশি। তো চলুন ভালো করে মোট ৫ টি কারণ পয়েন্ট আকারে জেনে নিই যাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি-
- শিশুদের বেশি ঝুঁকি রয়েছে।
- বয়স্কদের।
- টানা অনেকদিন ধরে ভুগছে এমন কোনো রোগ, যেমন: ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুসের কোন প্রকার রোগ, এইডস ইত্যাদি থাকলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
- কোন ব্যক্তি যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, সে সহজেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। তাই এরূপ ব্যক্তির অবশ্যই একটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
- যারা ধূমপান, মদ্যপান অর্থাৎ মাদকজাত দ্রব্য গ্রহণ করে তাদেরও এ ঝুঁকি রয়েছে।
প্রতি বছর বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় আনুমানিক কত লোক মারা যায়?
প্রিয় পাঠক, আপনি জানেন কী নিউমোনিয়ায় আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর আনুমানিক কত লোক মারা যায়? শুনলে অবাক হবেন। করোনা ভাইরাস, যেটির জন্য পুরো বিশ্ব এবং বাংলাদেশও আতঙ্কিত সেই ভাইরাসে বাংলাদেশে ১ বছরে যত মানুষ মারা গেছে প্রত্যেক বছর এর থেকে আরো বেশি মানুষ নিউমোনিয়ার কারণে মারা যায়। আর এর সংখ্যা হচ্ছে ২৪০০০। শুনে অবাক হচ্ছেন! তাই না? হ্যাঁ, এটাই সত্য।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ
- আমরা জানি বেশিরভাগ রোগের লক্ষণ জ্বর তো হবেই। একইভাবে নিউমোনিয়ার লক্ষণের প্রথমটি হচ্ছে জ্বর।
- ক্লান্তি অনুভব করা।
- কাশি হওয়া।
- শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া।
- শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- মাথাব্যাথা করা।
- শরীরে কাঁপুনি অনুভব করা।
- শরীরের মাংসপেশির মধ্যে প্রচন্ডরকম ব্যথা অনুভব করা।
- বমি বমি ভাব হওয়া।
- মুখের রুচি কমে যাওয়া।
- খেতে ইচ্ছা না করা।
আরো যেরকম জটিলতা দেখা দিতে পারে
- রক্তপ্রবাহের মধ্যে জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে ঘা হতে পারে এবং এই ঘা এর কারনে ফুসফুসে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পার।
- তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
- ফুসফুসের চারদিকে তরল জমা হতে পারে।
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা ও প্রতিকার
- সঠিক ওষুধ খেতে হবে।
- তরল খাবার খেতে হবে। যেমনঃ শরবত, ফলের রস, জুস ইত্যাদি।
- কোন প্রকার বাড়তি কাজ করা যাবে না অর্থাৎ পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে।
- কুসুম গরম পানি পান করা।
- লাল চা, আদা দিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যেতে হবে।
- শিশুদের মধ্যে যারা মাতৃদুগ্ধ পান করে তাদের মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না।
- বুকে অযথা তেল মাখা যাবে না।
- মনোবল শক্ত রাখতে হবে ও ধৈর্য রাখতে হবে।
- বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। যদি অবস্থা সংকটাপন্ন হয় তবে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
নিউমোনিয়া ভালো হতে কত দিন লাগে?
নিউমোনিয়ার প্রতিরোধ
- আমরা জানি, ইতোমধ্যে নিউমোনিয়া রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই সকলের বিশেষ করে ৫ বছরের নিচে বা ৬৫ বছরের ওপরে বয়সীদের অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে।
- ধূমপান, মাদকজাত ও তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। কেননা এসকল ব্যক্তিদের ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম। যার কারণে এরকম মানুষ সহজেই এতে সংক্রমিত হতে পারে।
- নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- পরিমিত সময় বিশ্রাম নিতে হবে,
- প্রত্যেকদিন ব্যায়াম করতে হবে।
- শিশুদের জন্মের পর ইপিআই শিডিউলের যেসকল ভ্যাকসিন রয়েছে সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
- শিশুকে চুলার ধোঁয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
- মশার কয়েল থেকেও আমাদের দূরে থাকা উচিত।
- সিগারেটকে না বলুন। আর যারা সিগারেট খান তারা ঘরের মধ্যে খাবেন না। এটি করলে আপনার পরিবারের সদস্যদের শরীরে নিকোটিন ঢুকে ও তাদেরও আপনার মতোই শারীরিক ক্ষরি সাধন হয়।
- সর্বোপরি, ধর্মীয় অনুসাশন মেনে চলুন। আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া চান। কেননা সবকিছুর মালিকই তো তিনি।