ইসলামের ইতিহাস

ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানুন।

ইসলামের ইতিহাস
ইসলামের ইতিহাস
    ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। এই শান্তির ধর্ম ইসলাম আমরা এমনি এমনি পাইনি। এই পৃথিবীতে লোকসংখ্যা কিংবা অর্থ কোনটি দিয়েই ইসলামের বিজয় হয়নি। এর নেপথ্যে রয়েছে ইমানি শক্তি, সাহস এবং বুকের তাজা রক্ত। যার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে লক্ষ লক্ষ লোকের প্রয়োজন হয় না, একজন মানুষ কিভাবে পুরো পৃথিবীকে পালটে দিয়েছেন তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছেন আমাদের মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহান আল্লাহ তায়ালা এমন এক মানুষকেই আমাদের মুসলিম উম্মার নবি ও রাসুল বানিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ! তো এখন চলুন জানা যাক ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে।

    বদর যুদ্ধ

     মক্কায় আল-আমিন খেতাবদারী মানুষটা নবুয়ত লাভের পর রাতারাতি শত্রুতে পরিণত হয়ে যায়। শুধু আমাদের নবি নন, পৃথিবীতে যত নবি-রাসুলকে মহান আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন তাদের সকলকেই দ্বীন প্রচার করতে গিয়ে সহ্য করতে হয়েছে অনেক নির্যাতন। মহানবি যখন তার নিজের বাসস্থান মক্কায় দ্বীন প্রচার করতে থাকেন তখন তাঁর মৃত্যু ঝুঁকি পর্যন্ত আসতে থাকে। যার ফলে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনায় হিযরত করেন। আচ্ছা, পাঠক বন্ধুরা মক্কা ও মদিনার নাম শুনে এর দুরত্ব আপনাদের কাছে কতটুকু মনে হচ্ছে? এই গ্রাম থেকে ঐ গ্রাম? যদি এটা মনে করে থাকেন তবে আপনার ধারণা সম্পূর্ণটা ভুল। মহানবিকে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে পাড়ি দিতে হয়েছিলো প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার! তখন মক্কার কাফেরেরা মহানবির অবস্থান জেনে তাঁকে ও তাঁর সাহাবিদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। সৌদি আরবের বর্তমান বদর শহরের কাছে তৎকালীন বদর উপত্যকায় বাঁধে এক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কাফেরদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১০০০ এর বেশি এবং মুসলমানদের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৩১৭ (মতান্তরে ৩০০ অথবা ৩১৩)। বদর প্রান্তের সেই ১৩ই মার্চের যুদ্ধ বর্তমানে মুসলমানদের জন্য এক জ্বলন্ত উদাহরণ। দুই দলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় কাফেরেরা দেখলো, নিতান্ত কম সৈন্য নিয়ে মসলমানরা যুদ্ধে এসেছে। যার ফলে তার মুসলমানদেরকে হালকাভাবে নিতে শুরু করে। কিন্তু কথা একটাই, মুসলমানদের ঈমানী শক্তি অটল। সেই যুদ্ধের দিন আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লালাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন,
    হে মহান আল্লাহ, তুমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ তা পূর্ণ কর। হে আল্লাহ, আমি তোমার ওয়াদার পূর্ণতা কামনা করছি।

    সেই কঠিন যুদ্ধের ময়দানে যখন দুই দলই হাজির হয় তখন কাফেরেরা মুসলমানদের লোকসংখ্যা দেখে ঠাট্টা ও তামাসা করতে থাকে ও তৎকালীন রিতী অনুসারে তারা প্রথমে তাদের তিন জন যোদ্ধাকে পাঠায়। তারা তিনজনই ছিলেন তৎকালীন যুগের পারদর্শী যোদ্ধা। এই তিনজন হলেনঃ

    • উতবা ইবনে রাবিয়া।
    • শাইবা ইবনে রাবিয়া।
    • ওয়ালিদ ইবনে উতবা।
    তারপর কাফেরেরা মুসলমানদের সাহসের কথা উল্লেখ করে মুসলমানদের মধ্যে তিনজনকে আসার জন্য বললেন। মুসলমানরা সংখ্যায় কম হওয়া সত্বেও পিছু হয়নি। কারণটা আগেই বলেছিলাম পাঠক বন্ধুর। সেটা আর কিছুই নয়, শুধুমাত্র ঈমানি শক্তি। যাহোক, মুসলমানদের পক্ষ হতে যে তিনজন গিয়েছিলো তারা হলেনঃ
    • আউফ ইবনে হারিস।
    • মুয়াবিজ ইবনে হারিস।
    • আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা।
    কিন্তু শয়তান কাফেরেরা বলে এই ৩ জন নাকি তাদের সাথে লড়াই করার যোগ না! এবং তারপর বলে তাদেরসমকক্ষ কাউকে লড়াইয়ের জন্য পাঠাতে।  তখন মুসলমানদের পক্ষ হতে পাঠানো হয়ঃ
    • হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব।
    • উবাইদা ইবনে হারিস।
    • আলি ইবনে আবি তালিব।
    হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সাথে কাফেরদের শাইবা; আলি ইবনে আবি তালিবের সাথে ওয়ালিদ ইবনে উতবা এবং উবাইদা ইবনে হারিসের সাথে ওয়ালিদ ইবনে উতবার লড়াই সংঘটিত হয়। কুরাইশদের পক্ষে তথা কাফেরদের তিনজনই নিহত হন। মুসলমানদের মধ্যে উবাইদা আহত হয় এবং তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। যুদ্ধের কয়েকদিন পর এই সাহসী বীর যোদ্ধা শহীদ হন। কাফেরদের তিনজন নেতৃস্থানীয় যোদ্ধার মৃত্যুর ফলে কুরাইশদের মনোবল ভেঙে যায়। এরপর কুরাইশরা মুসলমানদের উপর সকলে মিলে সরাসরিভাবে আক্রমন চালায়। এই যুদ্ধের পূর্বে আমাদের নবি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সাহাবিদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন, শত্রুরা অনেক বেশি সংখ্যায় এবং মুসলমানদের কাছে এলেই যেন তীর নিক্ষেপ করা হয়। মুসলমানদের তখন স্লোগান ছিলো "ইয়া মানসুর আমিত"। এটা বলে বলেই মুসলমানরা শত্রুপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধে কাফেরেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং পিছু হটার জন্য বাধ্য হয়। কুরাইশ পক্ষ তথা কাফেরদের নেতা ছিলো মহানবি (সাঃ) এর নিজের চাচা আবু জাহেল। সেই সময়ে দুই কিশোর মুয়াজ ইবনে আমর এবং মুয়াজ ইবনে আফরা এই শয়তান আবু জাহেলকে হত্যা করে। হযরত বিলালের হাতে নিহত হয় উমাইয়া ইবনে খালাফ এবং তার মামা। বিকেলের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। এই যুদ্ধে ১৮ জন মুসলমান শহীদ হয় এবং ৭০ জন কাফের নিহত হয়। তখন মুসলিমরা মদিনাতে ফিরে আসে। মুসলমানদের হাতে বন্দি হয় ৭০ জন কাফের। কিন্তু বন্দীদের সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। মুসলমানরা নিজেরা খেজুর খেয়ে বন্দীদেরকে দেয় রুটি খেতে। পাঠক বন্ধুরা, দেখেছেন ইসলাম কতটা সুন্দর! ইসলামের ইতিহাস কতটা সুন্দর! যাহোক, এই ইসলামের ইতিহাস থেকে আমাদের এই শিক্ষা নেওয়া উচিত, ঈমানি শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি। কেননা এতে থাকে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে রহমত। যার ফলে এতো কম সংখ্যক লোক নিয়েই মুসলমানরা জয় করেছিলো বদরের যুদ্ধ। মুসলমানেরা এতো সংখ্যক লোকের সাথে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও নিজের জীবণকে বাজি রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এজন্য অন্য সকল যুদ্ধে শহিদদের থেকে বদরের যুদ্ধে শহিদদের মর্যাদা বেশি। 

    বদর যুদ্ধের পরে ইসলামের ইতিহাস ও সারা বিশ্বে ইসলামের ছড়িয়ে পড়া

    এভাবেই হাজার হাজার মুমিনের পবিত্র রক্তের বিনিময়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময়ের খেজুরের পাতায় জরাজীর্ণ মসজিদ্গুলোতে আনা হয়েছে চাকচিক্য; ছোট কৌটায় ভরা আতরের শিশির বদলে আনা হয়েছে নামী-দামী ব্র্যান্ডের পারফিউম। তবে আমরা হারিয়ে ফেলেছি তখনকার মুসলমানদের মতো ঈমানি শক্তি। 
    যাহোক বদরের যুদ্ধের পর আর মুসলমানদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাসুল (সাঃ) এর নবুয়তী জীবণের ২৩ বছরের পুরোটাই ইসলামের অভাবনীয় প্রসার ঘটে আরব ছাড়িয়ে এশিয়া এবং আফ্রিকা পর্যন্ত। রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের পরেও ইসলামের প্রবৃত্তি থেমে থাকেনি। তখন খেলাফাতের দায়িত্ব পান হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং তাকে ইসলামের প্রথম খলিফা বলা হয়।

    হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সময়ে ইসলা্ম ধর্ম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাস

    হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ২৭ মাস অর্থাৎ দুই বছরের কিছু বেশি সময় খেলাফাতের দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাকে এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে বেশ কিছু অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে হয়। তখনকার সমইয়ে কতিপয় কিছু লোক নিজেদেরক্র নবী হিসেবে দাবী করে। তাদেরকে হযরত আবু বকর (রাঃ) সফলতার সাথে বিদ্দার যুদ্ধে দমন করেন। তিনি তৎকালীন বাইজেন্টাইন এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে এক অভিযান পরিচালনা করেন এবং এটি ইসলামি ইতিহাসের মোড়কে ঘুরিয়ে দেয়। তার পরবর্তীতে উমন ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এবং উসমান ইবনে আফনান এই অভিজান চালু রেখেছিলেন। যার ফলে মুসলিমদের সকল সম্রাজ্য কয়েক দশকের মধ্যে আবির্ভূত হয় শক্তিশালী হিসেবে। 

    হযরত উমর আল খাত্তাব (রাঃ) এর সময়ে ইসলাম ধর্ম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাস

    হযরত উমর আল খাত্তাব হলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাকে যোগ্য উত্তরসূরি মনে করে তার হাতে দায়িত্ব দিয়ে যান। রাসুল (সাঃ) এর পর হযরত উমরের যুগ ছিলো ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ যুগ। তার সময়ে ব্যাপক প্রসার ঘটেছিলো ইসলামের। খেলাফতের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছরেই হযরত উমরের হাত ধরেই মুসলমানরা বিজয় লাভ করে আজনাদেইন যুদ্ধে। একই বছরের সিরিয়ার দামেস্ক পর্যন্ত চলে যায় খেলাফত শাসনের সীমানা। পরের বছর ফাহল যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলমানরা। আবার ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগষ্ট মুসলামানরা জয় করে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে। সেই যুদ্ধটির নাম ছিলো ইয়ারমুখ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধটি ৬দিন স্থায়ী হয়েছিলো। এই যুদ্ধটি বর্তমান সিরিয়া-জর্ডান, সিরিয়া-ইসরাইল সীমান্তে অবস্থিত ইয়ারমুখ নদীর তীরে হয়েছিলো। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের মেরুদন্ড গুড়িয়ে যায়। ৬৩৭ সালে ভুমধ্যসাগরের পূর্ব অঞ্চল থেকে বাইজেন্টাইন সম্রাজ্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারালে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মুসলমানদের খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৪০ সালে আর্মেনিয়া বিজয় করে মুসলমানরা। ৬৪২ সালে আলেকজান্দ্রিয়া খেলাফতের অধীনে চলে আসে। 
    এতো এতো সফলতার পাশাপাশি মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলতে থাকে ষড়যন্ত্র। যার ফলে ৬৪৪ সালে মহান ব্যক্তিত্যের এই মানুষটিকে সম্মুখীন হতে হয়ে ছিলো এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার। এই সময় তিনি শহীদ হয়েছিলেন। পিরুজ নাহাওয়ান্দি অর্থাৎ যাকে আমরা সকলে আবু লুলু বলে চিনি সেই এ ঘটনাটি ঘটিয়েছিলো একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এই ঘটনার দিন, হযরত উমর যখন মসজিদে নববীতে ফজরের নামাজ পড়াচ্ছিলেন তখন সেই আবু লুলু পেছনদিক থেকে হযরত উমর (রাঃ) কে ছয়বার ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে। যার ফলে তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় ও তিনি শহীদ হন।

    হযরত উসমান (রা) এর সময়ে ইসলামের বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে পড়া

    তখনকার সময়ে একের পর এক ষড়যন্ত্রে খলিফাদের মৃত্যু হতে থাকলেও ইসলামের প্রসার কিন্তু থেমে থাকেনি। আরব থেকে মুসলিম শাসনের জনপ্রিয়তা পায় ইউরোপ পর্যন্ত। ৬৪৯ সালে হযরত উসমানের সময় মুসলমানেরা সাইপ্রাস দখল করে। আবার ৬৫১ সালে সাসানীয় সাম্রাজ্য দখল করে মুসলমানরা। এভাবেই একের পর এক দেশ ও সম্রাজ্য দখল করতে থাকে মুসলানরা। ৬৫৪ সালে মৃত্যু হয় হযরত উসমান (রাঃ)।

    হযরত আলী (রাঃ) এর সময়ে ইসলামের বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে পড়া

    হযরত উসমান (রাঃ) এর মৃত্যুর পর ইসলামের ৪র্থ খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন হযরত আলী (রাঃ)। হযরত আলী (রাঃ) মাত্র ৬ বছর খলিফা হিসেবে ছিলেন। তবে এর মধ্যেও মুসলমানেরা বেশ কয়েকটি বিজয় অর্জন করে। তার সময়েই বাইজান্টাইনদের সাথে ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। আর এভাবেই একের পর এক দেশ ও সম্রাজ্য মুসলমানদের দখলে আসতে থাকে।

    মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা ও মুসলিম বিজ্ঞানী

    প্রিয় পাঠক, একসময় এভাবেই মুসলমানেরা করেছে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল শাসন। চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ, রসায়নসহ জ্ঞান -বিজ্ঞানের এমন শাখা নেই যেখানে মুসলমানেরা নেতৃত্ব দেয় নি। ৬৩২ সাল থেকে ১৩০০ সাল পর্যন্ত মুসলমানদের তথা ইসলামের ইতিহাস ও বর্তমানের ইসলামের ইতিহাস পুরোই ভিন্ন। ইহুদি-খ্রিষ্টানরা যখন মহাশূন্য জয় করছে, তখন লিছু বাঙালি মোল্লাদের ফতোয়া উঠছে টেলিভিশন দেখা হারাম। কিন্তু আগামীকাল টেলিভিশন খুললে দেখবেন তিনিই সেখানে বসে টকশো করছে। লেখক হিসেবে আমার কথা হলো, আজ যেখানে পুরো বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা মুসলমানরা যদি এসব বলি তখন তা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের নিকট হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যদি আধুনিক বিজ্ঞানের খারাপ দিকগুলো বাদ দিই তথা মনে করেন, টিভিতে ভালো জিনিস ও খারাপ জিনিস দুটোই প্রচার হয়। এখন মনে করেন, কোন ব্যাক্তি খারাপ কোন গান বা ভিডিও  দেখল। এর ফলে সে গুনাহ করলো। কিন্তু আমরা মুসলমানরা যদি এসকল বাদ দিয়ে ভালো জিনিস মনে করেন সৌদি টিভিতে সারাদিন কবা শরীফ দেখানো হয়। সেই সাথে মক্কার ইমামের তিলাওয়াত করা কুরআন শুনানো হয়। এখন আমার কাছে প্রশ্ন, কেউ যদি ঘরে বসে থেকে আল্লাহর ঘরকে দেখে তখন হয়তো কারো মনে এটি দেখার সাধ জাগে এবং তার উপর ফরজ ইবাদত হজ্জ্ব করতে সে আরো আগ্রহী হয়। এখন পাঠক বন্ধুরা, আপনারাই বলুন এর ফলে কী সেই মুসলমান ব্যক্তিটির ইমান চলে যাবে? এটা সত্য কথা বটে, এমন অনেক অনেক খারাপ চ্যানেল আছে যেখানে অশ্লীলতাকে প্রচার করা হয়। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন চ্যানেল। আমার মতে মুসলমানদের টিভি দেখা হারাম এই স্লোগান বাদ দিয়ে এটা দেওয়া উচিত, " টেলিভিশন নয়, বাদ দিন টেলিভিশনে দেখানো হারাম জিনিসকে।" পাঠক বন্ধুরা, আমি একটা কথা বলি আমাদের সমাজে কতিপয় কিছু নামধারী আলেম আছে, যারা আমাদের এই শান্তির ধর্ম ইসলামটিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, ইসলামকে বিক্রি করছে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মাহফিলে বসে বলে টেলিভিশন দেখা হারাম, কিন্তু বাইরে গেলেই দেখা যাবে তার ফোনে অশ্লীল ভিডিও র কারখানা। যাহোক, এরকম মানুষদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা হিদায়াত দান করুন ~ আমিন। আর হিদায়াত না থাকলে ধ্বংস করে দেন। আমি আরেকটা কথা বলতে চাই, আমি কিন্তু ইসলাম ধর্মের কোন পণ্ডিত লোক নই। তাই আমার কথাবার্তায় ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই কোন ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন। নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করবেন ইনশাল্লাহ। আমার কোন প্রকার ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন, সত্য দ্বীন প্রচারে এগিয়ে আসুন। যে মুসলমানদের করা জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণার উপর ভিত্তি করে বর্তমান আধুনিক সভ্যতা দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই মুসলমানরা তাদের পূর্বশুরীদের দেখানো পথ ভুলে গিয়ে অন্য পথে হাঁটতে শুরু করেছে। আজকের ইসলামকে দেখে যারা মুসলমানদেরকে বিবেচনা করে তাদেরকে বলতে চাই, হয়তো আপনাদের মুসলমানদের তথা ইসলামের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে বেশি ধারণা নেই। সমস্যা নেই। উপরের লিখাগুলো ভালো করে পড়ুন ও নিচে আমি এ নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখেছি পাঠক বন্ধু। আপনি পড়া চালিয়ে যেতে থাকুন। ইনশাল্লাহ মুসলমানদের ও ইসলামকে বিবেচনা করতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, আগেই বলেছিলাম চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ, রসায়নসহ জ্ঞান -বিজ্ঞানের এমন শাখা নেই যেখানে মুসলমানেরা নেতৃত্ব দেয় নি। এখন এটা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ। তো চলুন জেনে নেই মুসলিম কিছু গবেষকদের যারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ, রসায়নসহ সব জায়গায় রেখেছিলো অসামান্য ভূমিকা। তো, চলুন শুরু করা যাক।

    আল-যাবের

    মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আল-যাবের অন্যতম একজন বিজ্ঞানী। তিনি গণিত শাস্ত্রে ছিলেন একজন পারদর্শী। তিনি বীজগণিতকে গণিতের একটি স্বাধীন ও সুশৃঙ্খল শাখায় রূপ দেন। আচ্ছা পাঠক বন্ধু, বলুন তো বীজগণিত ইংরেজী কি? জ্বি, আপনি ঠিক ধরেছেন। বীজগণিত ইংরেজি হচ্ছে Algebra। আচ্ছা পাঠক বন্ধু, আপনি কী এই শব্দটির সাথে বিজ্ঞানী আল যাবেরের নামের গন্ধ পাচ্ছেন। হ্যাঁ, এই বিজ্ঞানী আল যাবের নিজেই তার নাম থেকে এই নামটি নির্বাচিত করেন।

    জাবির ইবনে হাইয়ান ( ৭২২ খ্রিঃ- ৮০৪ খ্রিঃ)

    জাবির ইবনে হাইয়ান যাকে বলা হয় আরব রসায়নের জনক। এ্যালকেমি এবং ধাতব বিদ্যায় তার অবদান ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি (৭৮০ খ্রিঃ- ৮৫০ খ্রিঃ)

    এই মহান বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম হিন্দি এবং আরবি ভাষার সংখ্যা এবং ইউরোপের গণিতে বীজগণিতের ধারণা প্রবর্তন করেন।

    ইবনে ইসহাক আল-কিন্দি ( ৮০১ খ্রিঃ- ৮৭৩ খ্রিঃ)

    তিনি আরব দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এবং তাকে মুসলিম দার্শনিক হিসেবে প্রথম সারির একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    থাবিদ ইবনে কুররা Thābit ibn Qurrah  ( ৮২৬ খ্রিঃ- ৯০১ খ্রিঃ) 

    তিনি আরব চিকিৎসক, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ্। 

    বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠক, হাতে সময় কম থাকার কারণে বাকী বিজ্ঞানীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ইনশাল্লাহ ২-৩ দিনের মধ্যে বাকী বিজ্ঞানী ও ইসলামের বাকী ইতিহাসটিকে তুলে ধরা হবে। 
    আপাতত বিদায়। আসসালামুয়ালাইকুম।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
    • মোঃ সাব্বির আলী
      মোঃ সাব্বির আলী January 7, 2023 at 11:49 PM

      ইসলামের ইতিহাস খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
    comment url