ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার পোস্টে ডেঙ্গু জ্বর কী? কখন এবং কোথায় ডেঙ্গু রোগ হয়?এডিস মশা কামড়ায় কখন?ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, জ্বর হলেই কী ডেঙ্গু? ডেঙ্গু হলেই কী মারা যাবেন? কখন ডাক্তার দেখাতে হবে? ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার |
ডেঙ্গু জ্বর কী? কখন এবং কোথায় ডেঙ্গু রোগ হয়?এডিস মশা কামড়ায় কখন?ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, জ্বর হলেই কী ডেঙ্গু? ডেঙ্গু হলেই কী মারা যাবেন? কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?
ডেঙ্গু জ্বর কী?
চলছে এক মহামারি কোভিড-১৯। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে ডেঙ্গু। বর্তমান সময়ে ঢাকায় এর সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা গিয়েছে। ঢাকায় চলমান অনেক স্থাপনায় জমে থাকা পানির মধ্যে এডিস মশা ডিম পারছে এবং তা থেকে মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে।
এখন চলুন জানি ডেঙ্গু জ্বর কী বা ডেঙ্গু জ্বর কাকে বলে?
ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু হলো ভাইরাসজনিত একটি রোগ যা এডিস মশা ছড়ায়। এই ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করার ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে জ্বর উঠে এবং এ জ্বর থার্মোমিটার স্কেলে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এই ভাইরাসটির পরিবাহক হচ্ছে এডিস মশা। তাছাড়া, কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটির মধ্যেও এই জীবাণু চলে যায়। তখন সেই মশাটি ডেঙ্গু রোগের বাহক হয়ে যায়। আর এভাবেই বিস্তার লাভ করে ডেঙ্গু। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
কখন এবং কোন এলাকায় ডেঙ্গু রোগ হয়?
আপনারা কী কখনো শীতকালে বেশি ডেঙ্গু হয় শুনেছেন? না। কেননা শীতকালে মশা লার্ভা অবস্থায় বেঁচে থাকে এবং পরিপূর্ণ আকার গঠিত হয় না। তাছড়া এডিস মশার ডিম পারার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে জমে থাকা পানি। যা শীতকালে থাকে না বললেই চলে। যার কারণে সেই সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম থাকে। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়টাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং মানুষ এই সময়টাতেই আক্রান্ত হয়।
আচ্ছা, ডেঙ্গু রোগ কী বেশিরভাগ অভিজাত এলাগুলোতে হয় না কী বস্তি ও গ্রামে বেশি হয়? আশা করি আপনারা প্রায় সবাই ব্যপারটা জানেন। যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে বলছি ডেঙ্গু সাধারণত অভিজাত এলাকেগুলোতে বেশিরভাগ হয়ে থাকে, গ্রাম বা বস্তি এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব বেশি নেই। অভিজাত অঞ্চলগুলোর অনেক জায়গায় দেখবেন বড় বড় কন্সট্রাকশন কাজ চলে। সেখানে কিন্তু পানি জমে থাকে। আর সেখানেই এডিস মশা ডিম পারে এবং আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে ডেঙ্গু।
এডিস মশা কামড়ায় কখন?
আমাদের অধিকাংশ মানুষকে জিজ্ঞাস করা হয় যদি, এডিস মশা কামড়ায় কখন? তখন প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ বলবে অবশ্যই রাতে। আপনিও কী তাই মনে করেন? ব্যপারটা কিন্তু তেমন না। এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। মূলত এডিস মশা দিনে বা সন্ধ্যার আগ সময়টাতে বেশি কামড়ায়। এসময় এসকল মশা যেন তৎপর হয়ে উঠে। তাই বলা যেতে পারে রাতের চেয়ে দিনে মশার ব্যপারে আরো বেশি সচেতন থাকা উচিত যদি ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে চান। তাই অবশ্যই আমাদের কেবল মাত্র রাতে না বরং দিনেও এ বিষয়ে তৎপর হতে হবে।
ডেঙ্গুর বাহক |
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
আমরা জানি প্রায় সকল রোগেরই কিছু না কিছু লক্ষন থেকে থাকে। তেমনি ডেঙ্গুরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। ডেঙ্গুর বেশ কয়েকটি লক্ষণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- প্রচণ্ড পরিমাণে জ্বর। এই জ্বর ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকে। তবে এটি সর্বোচ্চ ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
- জ্বরের সময় শরীর ঘামতে পারে এবং সে সময় জ্বর কমে যাবে। তারপর আবার জ্বর উঠবে। এমনটাও হতে পারে অনেক সময়।
- হাড়, কোমড়, পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
- মাংশপেশিতে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- মাথা ব্যথা হতে পারে।
- অনেক সময় চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
- বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
- অবসাদ ও ক্লান্তিবোধ হতে পারে।
- শরীরের মধ্যে লাল লাল ঘামাচির মতো হতে পারে। যাকে স্কিন র্যাশ বলা হয়।
- এগুলো ছাড়াও আরো অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে ডেঙ্গু রোগের।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আমরা ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানবো।
জ্বর হলেই কী ডেঙ্গু?
বর্তমানে একদিকে চলছে করোনা মহামারি আবার অপরদিকে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। এজন্য আমরা সকলেই এ দুইটি ব্যপার নিয়ে চিন্তিত থাকি। কেননা এই দুইটি রোগের মূল লক্ষণটি একই রকম, অর্থাৎ জ্বর। তাই বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা জ্বর হলে ডেঙ্গু ও করোনা দুইটিই টেস্ট করতে বলেন। তবে আমাদের জ্বর হলেই বেশ সচেতন হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসকল রোগী মারা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই জ্বর হওয়ার পর আবগত ছিল না। যার কারণে তাদের সমস্যাটি ধরতে দেরি হয় ও তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
ডেঙ্গু হলেই কী মারা যাবেন?
সত্যি কথা বলতে আমাদের জীবণ ও মরণ মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে। আমরা মানুষ, আমরাও প্রাণী। আর সকল প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তাই আমরা সকলেই কোন না কোন ভাবে মরবই। সেটি মহান আল্লাহ তায়ালার হাতে। তাই আমরা এই প্রশ্ন করতে পারি না, ডেঙ্গু হলে কী মারা যাবো? আমাদের প্রশ্নটি এমন হতে পারে, ডেঙ্গু হলে মানুষের মারা যাওয়ার কী সম্ভাবনা আছে? ডেঙ্গু সাধারণত একটি নিদৃষ্ট সময় পর ভালো হয়ে যায়। তবে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যাদের অন্যান্য কোন ভয়ানক রোগের সংক্রমণ নেই তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা অনেক কম এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হারও কম। তাই আমাদের শিশুদের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হবে পাশাপাশি বয়স্কদের প্রতিও। তাই সবশেষে বলা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রায় বেশিরভাগ রোগীই সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়। অনেক কম লোকই এতে মারা যায় অর্থাৎ মৃত্যুহার অনেক কম। তবে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে ও সচেতন থাকতে হবে।
কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?
ডেঙ্গু হলে মূলত ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয় না। কেননা এর বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই। এই জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। প্যারাসিটামলই এর জন্য যথেষ্ট। তবে যা যা হলে আপনার ডাক্তারের নিকট যাওয়া প্রয়োজন-
- জন্ডিস দেখা দিলে।
- শ্বাসকষ্ট হলে।
- পেট ফুলে গেলে।
- নিয়মিত প্রস্রাব না হলে বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
- পেটে ব্যথা ও বমি হলে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করলে।
- শরীর বেশি দূর্বল হলে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি বুঝতে পেরেছেন। মহান আল্লাহর কাছে সকলে সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে সুস্থ থাকার তৌফিক দান করেন। (আমিন)।
Thanks for the valuable content.
You are most welcome!🥰