কোরবানির ইতিহাস
কোরবানির ইতিহাস
"সকল সম্প্রদায়ের জন্য আমি কোরবানির বিধান দিয়েছি, তিনি ( মহান আল্লাহ তায়ালা) তাদের (মানবজাতির) জীবণ উপকরণস্বরূপ যেসকল চতুষ্পদ প্রাণী দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সুরা হজ, আয়াত: ৩৪)"
আজকে আমরা এই কন্টেন্টে কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে জানব। পাশাপাশি এর উদ্দেশ্য,বিধান ও এর শিক্ষা সম্বন্ধে জানবো।
হাবিল ও কাবিলের কোরবানির ইতিহাস
"তুমি তাদেরকে ( আহলে কিতাবদের) আদমের পুত্রদ্বয়ের( হাবিল ও কাবিলকে বোঝানো হয়েছে) ঘটনা সঠিকভাবে পাঠ করে শুনে দাও;যখন তারা দুইজনই এক-একটি কোরবানি উপস্থিত করলো এবং তার মধ্য হতে একজনের কোরবানি ( হাবিলেরটা) কবুল হলো এবং অপরজনের (কাবিলেরটা) কবুল হলোনা। অপরজন বলতে লাগলোঃ আমি তোমাকে নিশ্চয়ই হত্যা করবো, প্রথমজন তখন বললো, আল্লাহ তায়ালা আল্লাহ ভীরুদের আমলই কবুল করে থাকেন। (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত নম্বর ২৭)।"
"তোমরা উভয়ে মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে কোরবানি পেশ করো এবং যার কোরবানি মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে তার সাথে আকলিমার বিয়ে দেওয়া হবে।"
আমরা বর্তমানে যখন কোরবানি দেই তখন আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের মধ্যে কার কোরবানি কবুল হয়েছে আর কারই বা হয়নি। কিন্তু হযরত আদম (আঃ) এর সময় কোরবানি কবুল হওয়া বা না হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল। নিদর্শনটি এমন ছিল যে, যার কোরবানি কবুল হোতো আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সেই কোরবানিকে ভষ্মিভূত করে ফেলত এবং যারটা কবুল হতো না তারটা ঠিক সেই জায়গায়ই পড়ে থাকতো।এই দুই ভাইয়ের মধ্যে কাবিল ছিল চাষী এবং হাবিল ছিল পশু পালনকারী। কোরবানির জন্য কাবিল গমের শীষ থেকে ভালো গুলো বের করে নিয়ে খারাপ গুলোর একটি আটি কোরবানির জন্য পেশ করল এবং হাবিল তার জন্তুর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং উৎকৃষ্ট একটি দুম্বা কোরবানির জন্য পেশ করল। তখন সেই নিদর্শন অনুযায়ী আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কোরবানিকে ভষ্মিভূত করল এবং কাবিলের দেওয়া কোরবানি টি সেই জায়গায় পড়ে থাকল। অনেক বর্ণনায় পাওয়া যায় সে,
"মহান আল্লাহর জন্য হাবিলের পেশকৃত দুম্বাটি মহান আল্লাহ তাআলার জান্নাতে উঠিয়ে নেন এবং তার জান্নাতে বিচরন করতে থাকে। অবশেষে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ওপর আরোপিত কোরবানির সময় ইসমাইল (আঃ) এর স্থলে দুম্বাটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।"
এই ভাবেই হাবিলের কোরবানিটি কবুল হলো এবং কাবিলের কোরবানিটি কবুল হলো না। তারপর আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে যা এই কনটেন্টে আলোচনার মুখ্য বিষয় নয়। পরবর্তীতে ইনশাল্লাহ এই নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখা হবে।
তবে বর্তমানে আমাদের মুসলিম সমাজে যেই কোরবানির প্রথা প্রচলিত আছে তা হাবিল ও কাবিলের অনুসরণে নয় বরং আল্লাহ কতৃক হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর আদর্শে ও দেখানো পথ অনুসরণে।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর কুরবানীর ইতিহাস
এই হাদিসে আরো উল্লেখ আছে, কোরবানি এমন একটি ইবাদত যা পূর্ববর্তী শরীয়তে ছিল এবং ইসলামি শরীয়তে তা বহাল আছে।
হযরত ইসমাঈল (আঃ) যখন কিশোর বয়সে উপনীত হলেন তখন তার পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানি করতে দেখেন। মূলত এটা ছিলো মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে একটি আদেশ। তারপর আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার ছেলে হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে তা বললো। হযরত ইসমাঈল (আঃ) তারপর বিনীতভাবে যা উত্তর দিয়েছিলেন তা মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
"অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো ( অর্থাৎ কিশোর বয়সে) তখন ইব্রাহিম বললো, আমি স্বপ্নে দেখি যে তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি?, বল। সে (হযরত ইসমাঈল আঃ) বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।" (সূরা-আস-সাফফাত;আয়াতঃ ১০২)
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মহান আল্লাহ তা'আলার আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। তখন তিনি তার পুত্রকে কোরবানি করার উদ্দেশ্যে মক্কার নিকটবর্তী এলাকা মিনা প্রান্তরে নিয়ে যান। পথিমধ্যে শয়তান বেশ কয়েকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা শয়তানকে পাথর মেরে তাড়িয়ে দেয়। মিনা প্রান্তরে যাওয়ার পর পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্র ইসমাঈল (আঃ) এর গলায় বেশ কয়েকবার ছুরি চালান। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি সফল হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি দেখতে পেলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা জবাই হয়ে গেছে।
এইখানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাঈল (আঃ) আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি যে নিদর্শন পেশ করেছেন তা স্মরণীয় করে রাখার জন্য এটিকে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের উপর ওয়াজিব ইবাদত হিসেবে আরোপ করেছেন।
কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য
কোরবানি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। তবে তা সকলের উপর নয়। যারা নিসাব পরিমাণ বা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের মালিক তাদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ তা'আলা সূরা-আল-কাউসারে উল্লেখ করেছেন,
" তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো (সূরা কাউসার, আয়াতঃ০২)"
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক বছর কোরবানি করেছেন। তিনি কখনো কোরবানি পরিত্যাগ করেন নি বরং যারা পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি তিনি ধিক্কার জানিয়েছেন। সাহাবি আবু হুরাইরা (বাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
" যে ব্যক্তি তাঁর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে ব্যক্তি যেন আমাদের ঈদের নামাজে ঈদগাহ মাঠের কাছেও যেন না আসে।" (সুনানে ইবনে মাজাহ। হাদিস নম্বরঃ ৩১২৩)।
বি,দ্রঃ আশা করি, লেখাটি ভালো লাগবে। লেখায় যদি কোন প্রকার ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে লিখুন এবং দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। (আসসালামুয়ালাইকুম)।