বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ রচনা
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ রচনা।
বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত একটি ছোট দেশ। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও ক্রিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের খ্যাতি ছড়িয়ে গিয়েছে বিশ্ব দরবারে। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও পরীক্ষার আসার উপযোগী। নিম্নে সহজ ও সাবলীল ভাষায় রচনাটি উপস্থাপন করা হলো।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ রচনা। |
ভূমিকা
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এটি ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের গণ্ডি পেরিয়ে এটি সারা বিশ্বে উন্মাদনার সৃষ্টি করে ও এটি বিশ্বের একটি জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশেও ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। আমাদের দেশের সর্বত্রই এখন ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় খেলা। আমাদের দেশের একটি নিজস্ব দলও আছে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি মর্যাদাসম্পন্ন স্থান করে নিয়েছে।
বাংলায় ক্রিকেটের আগমন
এই উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক কালে ক্রিকেটের আগমন ঘটে এবং তা মূলত ইংরেজদের মাধ্যমে। তখন ক্রিকেট খেলাটি ছিলো কলকাতা কেন্দ্রিক। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের পর ঢাকা অঞ্চলেও ক্রিকেট খেলা আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। কিন্তু তখন আমরা পাকিস্তানের শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম বলে ক্রিকেটে তেমন উন্নতি সাধিত হয়নি। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাও গড়ে উঠে। এই নিয়ণত্রণকারী সংস্থার নাম ছিলো 'বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড' সংক্ষেপে (বিসিসিবি), যা বর্তমানে 'বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড' (বিসিবি) নামে পরিচিত।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১৯৭৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর সহযোগী সদস্য হিসেবে মর্যাদা পায়। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রকিবুল হাসান। এর মাধ্যমেই মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেটের আত্নপ্রকাশ ঘটে। সেই আসরে বাংলাদেশ দল ৪টি ম্যাচ খেলেছিলো। ৪ টি ম্যাচের মধ্যে ২টি তে জয় এবং ২টি তে হার নিয়ে বিদায় নিয়েছিলো বাংলাদেশ দল। তারপর বাংলাদেশ দল ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখ সর্বপ্রথম পাকিস্তানের সাথে ওয়ান-ডে খেলে। তারপর আবার বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয়। সেই আসরে বাংলাদেশ ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে জয়লাভ করে। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা হয়ে থাকবে আজীবণ। শুধু জয়লাভের জন্য নয়, বরং এই জয়লাভ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নতুন আরেক সূচনা ঘটিয়েছিলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় দল আইসিসি কর্তৃক আয়োজিত বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। তারপর ১৯৯৮ সালে টানা ২২ টি ওয়ানডে ম্যাচে হারার পর মোঃ রফিকের অসাধারণ দক্ষতা ও নৈপূন্যে বাংলাদেশ কেনিয়ার বিপক্ষে আবার জয় পায়। সেই ম্যাচে মোঃ রফিক ৭৭ রান ও ৩টি উইকেট তুলে নেন। এভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেট আস্তে আস্তে পাকাপোক্ত হতে শুরু করেও খেলোয়াড়্গণ দক্ষ হতে থাকে। ২০০৫ সালে ওয়ানডে ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩-২ ম্যাচে হারিয়ে সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ম্যাচে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করে। ২০১৫ সালে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় করে। বাংলাদেশের এইসকল জয় ও প্রাপ্তি দেখে বড় বড় দল চমকে উঠে এবং পুরো ক্রিকেট বিশ্ব একটি নতুন পরাশক্তির আবির্ভাব লক্ষ করে।
আইসিসি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে অর্থাৎ মোট ৬ বার বিশ্বকাপে অংশ নেয়। সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে আমিনুল ইসলাম বুল্বুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। প্রথম বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ চমক দেখায়। সেই আসরে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ড এর মতো বাঘা বাঘা দলকে বাংলাদেশ হারায়। ২০০৩ সালে তেমন ভালো করতে না পারলেও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে সেরা সেরা-৮ এ জায়গা করে নেয়। ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৬ ম্যাচে ৩ টিতে জয় পায়। ২০১৫ সালে কোয়াটার ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বড় কিছু করতে পা পারলেও বড় বড় দলকে হারিয়েছে ও তাদের সাথে ব্যাপক প্রতিযোগীতাপূর্ণ লড়াই করেছে।
২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়
বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল সাউথ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে জয়লাভ করে। বিশ্বকাপের মতো বড় কোন আসরে এটি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ২০২০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ ডিএলএস প্রক্রিয়ায় ভারতকে ৩ উইকেটে হারায়। উইনিং শটটি এসেছিলো রাকিবুল হাসানের ব্যাট থেকে ও এই ক্রিকেটার সেই আসরে হ্যাট-ট্রিক করেও রেকর্ড করেছিলেন। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন আকবর আলী। তার অসাধারণ নৈপূণ্যে বাংলাদেশ বিজয়ের পথে এগিয়ে যায়। তাছাড়া বাংলাদেশ দলের সকল খেলোয়াড় দূর্দান্ত খেলেছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সর্বপ্রথম ২০০০ সালে টেস্ট খেলুড়ে দলের মর্যাদা লাভ করে। ২০০০ সালের ২৩ই নভেম্বর ভারতের সাথে বাংলাদেশ টেস্ট এর অবিষেক ঘটে। অভিষেক টেস্টেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেন ১৪৫ রান এবং নাইমুর রহমান দূর্জয় পান ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ভালো খেললেও ২য় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে হেরে যায় বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের আরেকটা ইতিহাস। মাত্র ১৭ বছর বয়সে অভিষেক টেস্টেই করেন সেঞ্চুরি যা তিনি ২০০১ সালে শ্রীলংকার সাথে করেছিলেন। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম টেস্টে জয় পায়। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে অন্যান্য ফরমেট তথা ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি হতে কিছুটা দূর্বল। আর তাই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই চলছে।
টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশ
২০০৫ সালে ক্রিকেটে যুক্ত হয় টি-টুয়েন্টি ফরমেট যেখানে ২০ ওভারে খেলা হইয়, অর্থাৎ একটি দল সর্বোচ্চ ২০ ওভার ব্যাটিং ও বোলিং করতে পারবে। বাংলাদেশ দল ২০০৬ সাল থেকেই খেলে আসছে ট-টুয়েন্টি ক্রিকেট।
ঘরোয়া ক্রিকেট
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট কোন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন ক্রিকেট লিগ শুরু হয়। ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে জাতীয় পর্যায়ে টুর্নামেন্ট শুরু হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ১ম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু হয়। তবে ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি চমৎকার সংযোজন। দেশী-বিদেশী খেলোয়াড়েরা এতে অংশ নেয়। দেশি খেলোয়াড়দেরকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় ও মূলত বিপিএল থেকেই বেরিয়ে আসে নতুন নতুন প্রতিভাসম্পন্ন খেলোয়াড়।
আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একাধিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে সুনাম অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সাধারণত শান্তিপূর্ণভাবে খেলার আয়োজন করে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশে রয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম এবং এই স্টেডিয়ামগুলোতেই খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ আইসিসির নির্দেশনায় এসকল আয়োজন করে থাকে।
বাংলাদেশে ক্রিকেটের প্রভাব
পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ক্রিকেট নিয়ে উদ্দীপণা বিরাজ করে। ক্রিকেট বাংলার মানুষের রক্তে মিশে আছে এবং এটি দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে তোলে। বাংলাদেশের অন্য কোন দেশের সাথে খেলা থাকলে বাড়তি একটা উন্মাদনা কাজ করে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে। ক্রিকেটের কারণে বাংলাদেশের নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে এবং ক্রিকেট বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে। একই সঙ্গে ক্রিকেট বিজ্ঞাপণ-বাণিজ্য ও অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট খেলাকে তাদের মনের মধ্যে গাঁথিয়ে ফেলেছে। এই ক্রিকেটের সাথে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আবেগ জড়িত। যার কারণে বাংলাশের বিজয়ে পুরো দেশ যেমন আনন্দিত হয় তেমনি হারের সময় সকলের মন খারাপ হয়ে যায়। তবে দেশবাসী সবসময় খেলোয়াড়দের প্রতি ভরসা রাখে ও তাদের সমর্থন করে যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের উচিত নতুন খেলোয়াড় তৈরীর চেষ্টা, ঘরোয়া লিগ আয়োজনসহ নানান পদক্ষেপ নেওয়া, তবেই বাংলাদেশ একদিন ক্রিকেটের উচ্চ শিখরে পৌছাবে।
Great content!