বোবায় ধরা ও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
বোবায় ধরা ও এর সাতকাহন।
বোবায় ধরা আমাদের সমাজের প্রচলিত একটি কথা। এটি কেন হয়ে থাকে, লক্ষণ, চিকিৎসা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে এই কন্টেন্টে। নিম্নে বিস্তারিত প্রকাশ করা হলোঃ
বোবা ধরার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। |
বোবায় ধরা কথাটি আমাদের দেশ ও সমাজে বহুল প্রচলিত কথাগুলোর মধ্যে অন্যতম। একটি গল্প দিয়ে শুরু করি। গতকাল আবুল রাতে ঘুমাচ্ছিলো। তখন হঠাৎ জানি কেন তার ঘুম ভেঙে যায়। তার মনে হতে থাকে তার গায়ে কোন প্রকার শক্তি নেই। হাত-পা নাড়াবার সামর্থ্যটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছে। তখন মুখেও যেন আওয়াজ করতে পারে না বা কথা বলার শক্তিটুকুও যেন তার লোপ পেয়েছে। আবার তার মনে হতে লাগলো তার বুকের উপর কে যেন উঠে বসেছে ও তার দম আটকে যাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটে কয়েক সেকেন্ড কিন্তু আবুলের মনে হতে থাকে এটা যেন ঘটছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তারপর তার মা তাকে ঠেলে উঠালো। তার এইসব আলামত দেখে তার মা ও পাড়া-প্রতিবেশীরা বলছে, 'ওকে নিশ্চই বোবা ধরেছে।' হ্যাঁ, আমাদের সমাজের ধারণা অনুসারে এটাকে বোবা ধরাই বলা হয়।
বোবায় ধরা জিনিসটি বৈজ্ঞানিকভাবে কী?
মূলত এটা একটা স্নায়ুর সমস্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে এটিকে বলা হয়ে থাকে স্লিপ প্যারালাইসিস ( Sleep paralysis). অনেকেই হয়তো শব্দটি শুনে অনেকেটা বুঝে গিয়েছেন। বাংলায় এটাকে বলা হয়ে থাকে ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত। এর কারণে একজন ব্যাক্তি একটি নিদৃষ্ট বা কিছু সময় আনুমানিক কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজের শরীরকে নাড়ানো ও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এটি কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কিন্তু এই কিছু মুহুর্তকে সেই ব্যক্তির কাছে কয়েক ঘণ্টার মতো বলে মনে হয় ও এই সময়টাতে এই ব্যক্তিতে অনেক নার্ভাস ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এটিকে গভীর ঘুম ও জেগে উঠার মাঝামাঝি একটি পর্যায় মনে হয়।
কত বছর বয়সী মানুষের এমনটি হয়?
আমাদের অনেকের মনেই হয়তো এই জিনিসটি ঘোড়পাক খায় যে, কত বছর বয়সী মানুষের এটি হয়ে থাকে? কিন্তু স্লিপ প্যারালাইসিস ( Sleep paralysis) হওয়ার নিদৃষ্ট কোন বয়স নেই। এটি যেকোন লোক ও যেকোন বয়ষ্ক লোকের হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এটি শিশু-কিশোর, কম বয়ষ্ক তরুণ যুবক-যুবতীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরার লক্ষণসমূহঃ
স্লিপ প্যারালাইসিস ( Sleep paralysis ) এর অন্যন্য রোগের মতো লক্ষণ রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানি আবার অনেকেরই কাছে অজানা। নিম্নে এই রোগের উল্লেখযোগ্য ৫ টি লক্ষণের কথা উল্লেখ করা হলোঃ
১) মনে হয় বুকের উপর কে যেন চেপে বসেছে ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মনে হয় যেন দম বের হচ্ছে না শরীর থেকে।
২) হার্টবিট বা পালস বেড়ে যায় ও রক্তচাপও অনেকসময় বেড়ে যায়।
৩) অনেক ভীত ও নার্ভাস মনে হয় সেই ব্যক্তিকে।
৪) মনে হয় কেউ সেই ব্যক্তির পাশে আছে ও তার কোন প্রকার ক্ষতি করতে চায়।
৫) কথা বলতে, চোখ খুলতে ও শরীর নাড়াতে কষ্ট হয়।
এমনটি কেন হয়?
সবকিছুরই একটি নিদৃষ্ট কারণ থেকে থাকে। তেমনিভাবে স্লিপ প্যারালাইসিস ( Sleep paralysis) এরও কিছু কারণ রয়েছে। নিম্নে উল্লেখযোগ্য ৫টি কারণ তুলে ধরা হলোঃ
১) পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।
২) মাদকাসক্তি বা ধুমপান করা।
৩) মানসিক সমস্যা ও হতাশা।
৪) পরিবারের কোন সসস্যের থেকে থাকলে বা এমনটি কোন সময় হয়ে থাকলে।
৫) অধিক পরিমাণে মদ্যপান করলে।
এটি এড়াতে করনীয় ও চিকিৎসাঃ
প্যারালাইসিস ( Sleep paralysis) এতো ভয়াবহ কোন রোগ নয়। এটি নিয়ে এতো চিন্তিত হওয়ার কোন কিছু নেই। তবে আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে সবসময় চাপমুক্ত রাখলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই ব্যাপারে অনেক চিকিৎসকগণ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
১) প্রতি রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো।
২) তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা।
৩) প্রতিদিন নিদৃষ্ট সময় অনুসারে ঘুমানো ও উঠা।
৪) কোলাহল্মুক্ত, শান্ত ও অন্ধকার পরিবেশে ঘুমানো।
৫) ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ব্যায়াম করা ভালো।
৬) দিনের বেলায় লম্বা সময় ধরে না ঘুমানো।
৭) ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮) মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৯) ঘুমের সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে রাখতে হবে।
১০) এমনটি হলে নার্ভাস বা চিন্তিত না হয়ে শান্ত থাকা।
যদি এটি কারো অনেক ঘণ ঘণ পরিমাণে হয় ও যদি সে ব্যাক্তি যদি নিয়মিত ঘুমাতে না পারে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপণ্ণ হতে হবে।
Good content
Thanks. Stay with this site onurag.com
Nice pos
Thank you so much💞
You are most welcome...❤️