করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) রচনা
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) রচনা
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) রচনা, যা পয়েন্ট আকারে দেওয়া আছে।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) |
ভূমিকা
করোনা ভাইরাস বা নভেল করোনা ভাইরাস বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া একটি ভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রামণের কারণে কোভিড-১৯ (COVID-19) Corona Virus Disease হয়ে থাকে। মানবদেহে এর সংক্রমণ প্রথমে বেশি লক্ষ্য করা না গেলেও এর আসল চরিত্র প্রকাশ পায় ১৪ দিনের মধ্যেই। এর ফলে আমাদের দেহে নানান রোগ দেখা দেয়। প্রথমে জ্বর, তারপর কাশি ও সর্বশেষ শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা। কম বয়স্ক যুবকদের জন্য এটা সাধারণ হলেও শিশু, বৃদ্ধ ও আগে থেকে রোগাক্রান্তদের জন্য এটা অনেক ভয়ংকর। সাধারণত শিশু, বৃদ্ধ ও আগে থেকে রোগাক্রান্তরাই এ ভাইরাসের শিকার হয়ে থাকে।
উৎপত্তি
করোনা ভাইরাস মানবদেহে সর্বপ্রথম চীনের উহানে ধরা পরে। যখন এই ভাইরাস সম্পর্কে জানানো হয় তখন বলা হয়েছিলো এটা মেরুদণ্ডি প্রাণী থেকে তা এসেছে। কিন্তু, এটা বলার আরো কয়েকদিন আগে থেকেই মানবদেহে এর সংক্রামণ শুরু হয়। তবে ব্যপারটা স্পষ্ট নয় মূলত কোন প্রাণী থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। তবে ধারণা করা বাদুর বা কুকুরের শরীর থেকে তা মানবদেহে সংক্রমিত হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। চীনের পর ইউরোপে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পরে।
নামকরণ
জেনেভায় World health organization (WHO) এর সম্মেলণে এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছিলো কোভিড-১৯ (COVID-19) যা Corona Virus Disease এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা যখন এক হাজার ছাড়ায়, তখন এর নামকরণ করা হয়। অপরদিকে ইন্টারন্যশনাল কমিটি অব ট্যাক্সনমি অব ভাইরাসেস (International Committee of taxonomy of viruses) এই
ভাইরাসটিকে সার্স-সিওভি-২ হিসেবেও পরিচিতি দিয়েছে।
গঠন
সাধারণত ভাইরাস প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে তৈরী হয়। ভাইরাসের মধ্যে (DNA) Deoxyribonucleic acid ও RNA (Ribonucleic acid) বিদ্যমান থাকে। করোনা ভাইরাসও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৯ সালের ২১ শে জানুয়ারী চীনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাসের জিনের গঠণ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেন। জিন সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের পর থেকে সরা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা মগ্ন হয় প্রতিষেধক তৈরীর কাজে। কিন্তু এই ভাইরাসের কয়েকদিন পর পরই জিনের পরিবর্তন ঘটে বা Genetic change ঘটে। করোনা ভাইরাসের সারফেসে থাকে স্পাইক প্রোটিন (এসিই-২) থাকে। আর এটাই ভাইরাসের মূল কোষকে বেধে রাখে। এই প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করতে পারলেই করোনা ভাইরাসকে ধ্বংস করা যাবে। প্রোটিনটিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্যই চলছে রাতভোর গবেষণা।
আরো পড়
প্রকারভেদ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরসের কিছুদিন পর পর জিন বদলে বদলে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে টিকে থাকার জন্য এই বহুরূপী করোনা ভাইরাস জিন পাল্টিয়েছে মোট ৩৮০ বার। করোনা ভাইরাসের এই জিন পরিবর্তন বা মিউটেশনই ভয়ের কারণ। এতে ভ্যকসিন প্রয়োগে অনেক সমস্যার সম্মুখীণ হতে হবে।
ছড়িয়ে পড়া
চীনে সর্বএপ্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলেও সর্বপ্রথম এর হটবেড ছিল জার্মানির হোসাইনবার্গে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, কোভিড-১৯ শিশু, বয়স্ক ও রোগাক্রান্তদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। মূলত ৬০ বছরের উপরের লোকদের এই ভাইরাসে প্রাণ হারানোর শঙ্কা বেশি। এই ভাইরাস সর্বপ্রথম গলা ও তারপর পর্যায়ক্রমে ফুসফুসে আক্রমণ করে। তখন করোনা ভাইরাস তার ভয়াবহতা প্রকাশ করে। করোনা ভাইরাস অতি সহজে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে অনেক সহজে ছড়িয়ে পরতে পারে। সর্দি, কাশি , হাঁচি ইত্যাদির মাধ্যমে মূলত এটা ছড়ায়। কোন স্থানে এই ভাইরাস লেগে থাকলে এতে কেউ হাত দিলে তার শরীরেও এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর ছড়িয়ে পরা সমানুপাতিক। যেমনঃ A এর শরীরে করোনা ভাইরাস আছে। এখন সে B ও C এর সাথে মিশলো। যার কারণে B ও C করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলো। আবার B ও C এর সাথে আবার D ও E মিশলো। যার ফলে তারাও আক্রান্ত হলো। আর অনেকটা এরকমভাবেই ছড়িয়ে পরে এই ভাইরাসটি।
করোনার ভাইরাসের লক্ষণ
১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্ল হয়েছিলো। যা পৃথিবীতে অনেক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিলো। করোনা ভাইরাসের কারণে ফ্ল হয়ে থাকে। তাই সর্বপ্রথম একে করোনা ভাইরাসের চেয়ে আরো কম শক্তিশালী মনে করা হতো। কিন্তু করোনা ভাইরাস এখন অনেকের শরীরে কোন প্রকার লক্ষণ ছাড়া প্রকাশিত হয়।
করোনা ভাইরাসে আমাদের মৃত্যু ঝূঁকি রয়েছে। এর কিছু লক্ষণ রয়েছে। নিম্নে এর কিছু লক্ষণ প্রকাশ করা হলোঃ
১) প্রচন্ড পরিমানে জ্বর।
২) শুকনো কাশি ।
৩) শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি।
৪)সর্দি লাগা।
৫) গলাব্যথা ইত্যাদি।
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি
১/ পুরুষদের করোনার ঝুঁকি ব্যপক। বিশেষ করে যারা ধূমপায়ী। কেননা যারা ধুমপায়ী তাদের ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর জোড় অন্যান্য মানুষের তুলনায় কম থাকে। যার কারণে করোনা ভাইরাস তাদের শরীরে অতি সহজে ছড়িয়ে পরতে পারে।
২/ বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
৩/ করোনা ভাইরাস শুধু আমাদের ফুসফুসে ও শ্বাসনালীতে আক্রমণ করে না বরং আমাদের শরীরের অক্সিজেন লেভেল অনেক পরিমাণে কমিয়ে দেয়।
৪/ অনেকে মনে করে, গরমে এই ভাইরাস বাড়ে, আবার অনেকে মনে করে শীতে করোনা ভাইরাস বাড়ে। কিন্তু করোনা ভাইরাস এর মিউটেশন বা জেনেটিক পরিবর্তন করার কারণে তা নিদৃষ্ট করে বলা যায় না।
৫/ অ্যন্টিবডি তৈরীর ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা যে কতটা কার্যকর তা ভালো করে বলা যাচ্ছে না।
৬/ নারীরা কোভিড-১৯ ভাইরাসের হাত থেকে কিছুটা নিরাপদ। কেননা নারী দেহে অটোইমিউশন ডিজিজের প্রবণতা বেশি হওয়ায় করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন না কোন এন্টিবডি শরীরে তৈরী করে ফেলে। এতে করোনা ভাইরাস পরাজয়ী হয় ও বেশি সংক্রমিত করতে পারে না। যার কারণে নারীদের মৃত্যুহার পুরুষের তুলনায় অনেক কম।
চিকিৎসা
করোনা ভাইরাসের নিদৃষ্ট কোন প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। যার কারণে করোনা ভাইরাসের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন লেভেল অনেক কমে যায়। এজন্য তাকে সর্বদা অক্সিজেন দিতে হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসেরও সমস্যা হয়। তাতে অক্সিজেন ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অনেক ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কিডনিরও ক্ষতি করে থাকে। যার কারণে ডায়ালোসিস করাতে হয় এমন রোগীদের। অতিরিক্ত প্রোয়োজ্নে করোনা ভাইরাস যাদের একবার হয়ে গিয়েছে তাদের শরীর থেকে এন্টিবডি এনে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
করোনা ভাইরাসের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
করোনা ভাইরাস থেকে বঁচার জন্য ও তা হলে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রতিকার ও প্রতিরোধ্মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের যা যা করতে হবে-
১/ মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না।
২/ ২০ সেকেণ্ড পর পর ভালো করে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া।
৩/ বার বার নাক-মুখে স্পর্শ না করা।
৪/ নাক, মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেওয়া।
৫/ বহিরাগত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা।
৬/ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
৭/ নিজে অসুস্থ হলে অন্যদের কাছে না যাওয়া।
৮/ অসুস্থ হলে থালা-বাসন সহ সকলকিছু আলাদা করে রাখা।
৯/ ময়লা কাপড় ও বাইরে থেকে আসলে কাপড় ধুয়ে ফেলা।
১০/ পর্যাপ্ত পানি পান করা।
১১/ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া।
১২/ ফলের রস পান করা।
১৩/ উচ্চ তাপমাত্রায় কাপড় শুকানো।
১৪/ গণপরিবহণ এড়িয়ে চলা।
১৫/ অসুস্থ জীবজন্তু থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা। পোষা প্রাণী থাকলে ভালো করে ধোয়া।
১৬/ সচেতন হওয়া।
১৭/ অন্যকে সচেতন করা।
১৮/ মনে সাহস রাখা।
১৯/ অন্যকে সাহস জোগাতে সহায়তা।
২০/ লকডাউনসহ সকল সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা।
উপসংহার
করোনা ভাইরাস আমাদের দেহের ক্ষতিসাধণ করে পাশাপাশি আমাদের মৃত্যুঝুঁকি তৈরী করে। আমাদের তাই এই ভাইরাস থেকে সচেতন থাকতে হবে, অন্যকে সচেতন করতে হবে। আমাদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। সর্বোপরি, আমাদের সকলকে সচেতন থেকে ও অন্যান্য দিকনির্দেশনা মেনে করোনা থেকে বাঁচতে হবে।
খুবই ভালো হয়েছে। তবে কমপক্ষে ২০ পয়েন্ট থাকলে খুবই ভালো হতো। করো কাছে ২০ পয়েন্ট আকারে থাকলে যোগাযোগ করুন nazrulcomputerclub@gmail.com
ধন্যবাদ। আমি আরো কয়েকটা পয়েন্ট এড করবো ইনশাআল্লাহ।😍